দক্ষতা অর্জনের গুরুত্ত্বঃ(Importance ot Skill)
দক্ষতা অর্জনের গুরুত্ত্বঃ(Importance of Skill)
আমরা প্রতিটি মানুষ কোন না কোন বিষয়ে দক্ষ। কিছু মানুষ একাধিক বিষয়ে দক্ষ, কিছু মানুষ একটি নির্দিষ্ট বিষয়ে দক্ষ ।আমাদের জীবন পরিচালনা করতে গেলে কোন না কোন বিষয়ে আমাদের দক্ষ হতেই হয় এই দক্ষতা টাকা দিয়ে কেনা যায় না; দক্ষ হতে হলে কোন বিষয় সম্পর্কে আগে জ্ঞান অর্জন করতে হয় সেই বিষয় সম্পর্কে দক্ষ হতে হলে আমাদের সেই জ্ঞান এর পিছনে সময় দিতে হয় পরিশ্রম করার মানসিকতা থাকতে হয় এবং সর্বোপরি অধ্যবসায়ী হতে হয়।জ্ঞান এবং দক্ষতা এক জিনিস নয় কোন ব্যক্তি কোন বিষয়ে জ্ঞানী হতে পারে বা জ্ঞান অর্জন করতে পারে কিন্তু সেই জ্ঞানকে যদি বাস্তবে প্রয়োগ করতে না পারে তাহলে সে দক্ষ হতে পারে না।সুতরাং কোন বিষয় সম্পর্কে দক্ষ হতে হলে আমাদের সেই বিষয় সর্ম্পকে ভালো জ্ঞান অর্জন করতে হয় এবং সেই জ্ঞানকে যখন বাস্তবে প্রয়োগ করে লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব হয় তখনই তাকে দক্ষতা বলা হয়।
জীবনটাকে এগিয়ে নিতে কিছু বিষয়ে দক্ষতা অর্জন অতি জরুরি বিষয়। আমরা আজকে কিছু আত্মউন্নয়নমূলক দক্ষতার কথা জানব।
১। ঘুম নিয়ন্ত্রণ
সুস্বাস্থ্য ধরে রাখার জন্য আমাদের ঘুমের বিকল্প নেই। এই ঘুম হতে হবে নিয়মিত এবং পরিমিত স্বাস্থ্যবিধগণের মতে প্রতিদিন একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের ৭/৮ ঘন্টা ঘুমানো উচিত। এর বেশি ঘুমানো স্বাস্থ্যের জন্য ভালো না এবং কম ঘুমানো স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ ।তাই ঘুম নিয়ন্ত্রন একটি অন্যতম দক্ষতা।
২।টাইম ম্যানেজমেন্ট বা সময় ব্যবস্থাপনা
আমাদের জীবনের খুবই গুরুত্বপূর্ণ দক্ষতা হল টাইম ম্যানেজমেন্ট হচ্ছে কোন কাজের গুরুত্ব কি রকম সেই অনুসারে কাজগুলো সম্পন্ন করা। অধিক গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো আগে সম্পন্ন করা এবং অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো পরে সম্পন্ন করা অর্থাৎ আপনি কোন কাজটি আগে করবেন, কোন কাজটি পরে করবেন সেটি আগে থেকেই ব্যবস্থাপনা করে রাখবেন।এজন্য প্রয়োজন হলে আপনি ডাইরি মেইনটেইন করতে পারেন।
৩। “না বলতে পারা”
“না বলতে পারা” না বলতে পারা মানে আপনি একজন নেতিবািচক মানুষ- বিষয়টা কিন্তু এরকম না। না বলতে পারা একটি দক্ষতা।আপনার কাছে কোন কাজটি গুরুত্বপূর্ণ; আপনি কোন কাজটি করতে পারবেন; কোন কাজটিতে জড়ানো আপনার জন্য ভালো বা সম্ভব হবে না,তা আপনাকে বুঝতে হবে এবং যে কাজটি আপনার জন্য ভালো সেই কাজটি করতে হবে এবং যে কাজটি আপনার জন্য ক্ষতিকর/সম্ভব না সেই কাজটিকে পজেটিভলি “না” পড়ার দক্ষতা অর্জন করতে হবে।তাতে আপনার সম্মান অক্ষুণ্ণ থাকবে এবং অনেক অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি থেকে রক্ষা পাবেন।
৪। নিজেকে মূল্যায়ন করা
আপনি কোন কাজে সফল হতে চান প্রথমেই আপনার নিজেকে মূল্যায়ন করতে হবে। কোন বিষয়ে আপনার শক্তি বেশি কোন বিষয়ে আপনি দুর্বল এই দুটি জিনিস আপনাকে খুঁজে বের করতে হবে। আপনি যে বিষয়ে শক্তিশালী, আপনি যেই কাজটি ভালো বোঝেন বা পারেন সেই কাজটি আপনি করলে সহজে সফল হতে পারবেন এবং যেই কাজটি বা বিষয়ে আপনি দুর্বল সেই কাজটি ত্যাগ করলে বা না করলেই আপনার জন্য ভালো।আপনি যে বিষয়ে দুর্বল সেই বিষয়টিতে কাজ করতে গেলে অনেক পরিশ্রম এবং অধ্যাবসায় দ্বারা অনেক সময় সম্ভব হয় কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আপনি ব্যর্থ হতে পারেন সেক্ষেত্রে আপনার মধ্যে ব্যর্থ হওয়ার ফলে হতাশা জন্মাতে পারে;তাই যে বিষয়ে আপনি দুর্বল সেই কাজটি না করাই ভালো এজন্য বলা হয় “দুর্বলতা উন্নত করার চেয়ে নিজের শক্তি আরো বাড়ানো অনেক ভালো”।
৫।একজনের কথা অন্যজনকে না বল
এই কাজটি আমরা প্রায়ই করি।ইচ্ছায় অথবা অনিচ্ছা্য। যখন আপনি একজনের কথা অন্যজনকে বলবেন অনুরূপভাবে সেও আপনার কথা অন্যজনকে বলতে পারে।সে মনে করবে যে আপনি এরকম একজনের কথা অন্যজনকে বলেন সুতরাং তার কথাও অন্যজনকে বলে দিতে পারেন। এতে করে আপনার প্রতি বিশ্বাস কমে যাবে এবং আপনি গ্রহণযোগ্যতা হারাবেন।
৬।অন্যের কথা শোনা কথা
অন্যের কথা শোনা কথা শোনা একটি দক্ষতা আপনি কোন মানুষকে কতটা গুরুত্ব দিচ্ছেন তা বোঝা যায় আপনি তাকে কতটা গুরুত্বসহকারে শুনছেন। আমরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অন্যের কাজ কথা না শুনে নিজের কথাই শুধু বলতে চাই।যখন আপনি অন্যের কথা মনোযোগ সহকারে শুনবেন তখন সেই লোকটা ভাববে আপনি তাকে গুরুত্ব দিচ্ছেন আপনাকে সে বিশ্বাস করবে এবং তাঁর আস্থার জায়গা মনে করবে। সে আপনার প্রতি বিশ্বাসী হবে।
৭।ইতিবাচক মানুষের সাথে চলা
ইতিবাচক মানুষের সাথে চলা খুবই চ্যালেঞ্জিং কারণ আমরা খুব অল্প সময়ে কোন মানুষকে সহজে চিনতে পারিনা।কোন মানুষের সাথে চললে সেই মানুষটার কথা কাজকর্ম আচরণ আমাদের আচরণের ওপর প্রভাব বিস্তার করে। যদি আমরা ইতিবাচক মানুষের সাথে চলি তাহলে তার কথা,কাজ-কর্ম যেমন আমাদের আচরণকে ইতিবাচক করে তেমনি নেতিবাচক মানুষের সাথে চললে আমাদের আচরণের উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।
৮।মিলেমিশে কাজ করা
বেশিরভাগ সময় আমরা সব কাজ একা করতে চাই। অন্যের সাহায্য নিতে চাইনা; মনে করি অন্যের সাহায্য নিলে আমি ছোট হয়ে যাব কিন্তু তা নয় বরং অন্যের সাহায্য না নিয়ে নিজে সেই কাজে একা ব্যর্থ হলে আমরা ছোট হয়ে যাব। এ জন্য সবাই মিলে সফল হতে পারি এরকম বিষয়ে দক্ষ হওয়ার ক্ষেত্রে একা চেষ্টা না করে সবাই মিলে চেষ্টা করা ভাল।
৯।বর্তমানে বাস করা
আমাদের কখনোই অতীতকে ভুলে যাওয়া উচিত নয় তবে অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে সেটা বর্তমানে বাস্তবায়ন করে ভুলগুলো সংশোধন করা বা ভুলের সংখ্যা কমানো উচিত।অতীতের অনুশোচনায় বা ভবিষ্যতের আশঙ্কায় আতঙ্কিত হয়ে বর্তমানকে আড়ষ্ট না করে বর্তমানটাকে সুন্দর করে সাজানোর চেষ্টা করাই মঙ্গলজনক।
১০।জনসম্মুখে কথা বলা
একজন সফল মানুষের অন্যতম গুণ হচ্ছে জনসম্মুখে কথা বলার দক্ষতা। যদিও কাজটা খুব কঠিন; প্রাথমিক অবস্থায় এটি মোটেও করা সম্ভব নয়। তবে নিয়মিত অনুশীলনের মাধ্যমে এই দক্ষতা নিজের মধ্যে গড়ে তুলা সম্ভব।
১১. ইচ্ছাশক্তি ধরে রাখা:
ফ্লোরিডার মনোবিজ্ঞানী রয় বাউমেইস্টার তার ‘উইরপাওয়ার: দ্য গ্রেটেস্ট হিউম্যান স্ট্রেথ’ বইয়ে লিখেছেন, আমাদের মাঝে প্রতি মুহূর্তে অসীম ইচ্ছাশক্তি বিরাজ করে। এটা প্রাণশক্তি মতো। একে ধরে রাখার উপায় হলো, সিদ্ধান্ত গ্রহণে সীমাবদ্ধতা আনা।
১২. সততার চর্চা করুন: যখন বলার কিছু নেই, তখন যে কিছু বলতেই হবে তা নয়। ফেসবুকের চিফ অপারেশন অফিসার শেরিল স্যান্ডবার্গ অকপটে সত্য বলার চর্চা করেন। এতে করে সবার কাছে তার এক অনন্য ব্যক্তিত্ব ফুটে ওঠে। সততার চর্চা মানুষকে অন্যের কাছে বিশ্বাসযোগ্য ও আস্থাভাজন করে তোলে।
১৩. বেশি পড়ুন:
সব বই-ই ভালো। কিন্তু সবগুলো সেরা নয়। তবে যাই পড়েন না কেন, কিছু না কিছু শিখতে পারবেন। কাজেই প্রতিদিন বই পড়ার অভ্যস গড়ে তুলুন। যাই পড়েন না কেন, গভীরভাবে বোঝার চেষ্টা করুন। প্রয়োজনে এক পাতায় একাধিকবার ঢুঁ মারুন।
১৪. নতুন ভাষা শিখুন:
বহু গবেষণায় বলা হয়েছে, নতুন একটি ভাষা শেখার মাধ্যমে মানুষের স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি পায়।
১৫. সৃষ্টিশীল চিন্তা করুন:
২০১১ সালের এক গবেষণায় বলা হয়, আরাম এবং অমনোযোগী হয়ে যারা চিন্তা করেন তাদের মধ্য থেকে সৃষ্টিশীলতা বেরিয়ে আসে।
১৬. মধ্যস্থতা করুন:
সাম্প্রতিক এক গবেষণায় বলা হয়েছে, মধ্যস্থতার সময় আপনি যা দিচ্ছেন তার প্রতি জোর দিয়ে কথা বললে অপরপক্ষ আগ্রহী হবেন। যেমন, এ জিনিসের জন্যে এক লাখ টাকা দেবেন। এর চেয়ে কৌশলি কথা হলো, এক লাখ টাকায় আমি জিনিসটি আপনাকে দিয়ে দেবো।
১৭. মানসিক চাপ কমান:
কাজ ও মনের চাপের কারণে উৎপাদনশীলতা ও মনোযোগ নষ্ট করবেন না। স্থিতিস্থাপক হয়ে উঠুন। মানসিক চাপ সামলাতে ব্যবস্থা নিন। নয়তো কোনো কাজই সম্পন্ন করতে পারবেন না।
১৮. বন্ধুত্ব গড়ে তুলুন:
বড় হয়ে নতুন বন্ধু গড়ে তোলা একটু কঠিন হতে পারে। কিন্তু অনেক সহজও বটে। গবেষণায় বলা হয়, বন্ধুত্ব সৃষ্টির অভ্যাসে মানুষের সুযোগ বাড়তে থাকে।
১৯. ধীরগতিতে কাজের অভ্যাস ত্যাগ করুন:
আর এ কাজটি করতে সবকিছু নিখুঁতভাবে সম্পন্ন করার অভ্যাস গড়ে তুললে হবে না। কোন কিছুই নিখুঁত নয়। কিছু ভুল থাকবেই। এগুলো মেনে নিতে হবে।
২০. সঞ্চয় করুন:
যখন থেকে উপার্জন শুরু করবেন তখন থেকেই কিছু না কিছু সঞ্চয় করুন। যদি না করে থাকেন, তবে আজ থেকেই উদ্যগী হয়ে উঠুন। এই সঞ্চয় এক সময় আপনার সম্পদে পরিণত হবে।
২১. কর্মস্থলে বন্ধু তৈরি করুন:
সম্পর্ক বিষয়ক বিশেষজ্ঞদের মতে, কর্মস্থলে বন্ধুত্ব বানানো ভালো কিছু বয়ে আনে। কেবল কথা বললেই হবে না। তাদের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয় শেয়ার করুন। ওয়াশিংটন স্টেট ইউনিভার্সিটির গবেষকরা তাদের গবেষণায় বলেন, সহকর্মীদের সঙ্গে আবেগের আদান-প্রদান করতে হবে। মনে ঠাঁই নিতে না পারলে বন্ধুত্ব লাভ করা যায় না। তা সে কলেজেই হোক বা অফিসেই হোক।
good job
উত্তরমুছুন